সুদানের দারফুরে আরও গণকবর পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিম দারফুর রাজ্যের রাজধানী আল-জেনিনায় আরও অন্তত ৮৭ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। এরা গত মাসে আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) ও তাদের সহযোগীদের হাতে নিহত হন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর ওএইচসিএইচআর জানায়, গত ১৩ থেকে ২১ জুনের মধ্যে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। আরএসএফ পরে স্থানীয় লোকজনকে নির্দেশ দেয় শহরের বাইরে এসব মরদেহ কবর দিতে।
ওএইচসিএইচআর জানায়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজন নারী ও সাতজন শিশু রয়েছে। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী অনারব মাসালিতের কিছু সদস্য রয়েছে।
জাতিসংঘের হাতে ইতিমধ্যে কিছু প্রতিবেদন এসেছে, যেখানে আরব মিলিশিয়াদের লক্ষ্যবস্তু মাসালিত গোষ্ঠীর পুরুষদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এই সংঘাত ‘জাতিগত রূপ’ নিয়েছে।
ওএইচসিএইচআর আরও জানায়, কিছু কিছু মানুষ গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন। আর অন্যরা গত জুনে পশ্চিম দারফুরের গভর্নর খামিস আবদুল্লাহ আকবরকে হত্যার পর যে সহিংসতা শুরু হয়, তার শিকার।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, মৃত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবার এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে নির্মম ও অসম্মানজনক আচরণ করা হয়েছে, তাতে তিনি আতঙ্কিত। তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হতে হবে। পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
ভলকার চলমান সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ খুঁজে বের করার অনুমতি ও সুযোগ করে দিতে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা আশা করি যে যুদ্ধরত পক্ষগুলো নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ খুঁজে বের করার অনুমতি ও সুযোগ দেবে এবং তাদের পরিবার এবং সম্প্রদায়কে এই বেদনা ও ক্ষতির জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন দেবে।”
জাতিসংঘের এই ঘোষণার আগেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সুদানে একটি শান্তিরক্ষা মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মিশনে ৩,০০০ সৈন্য এবং ২,২০০ পুলিশ সদস্য থাকবে। মিশনের প্রধান কাজ হবে সহিংসতা বন্ধ করা, মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি করা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে সহায়তা করা।
সুদানের দারফুরে চলমান সংঘাত দেশটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই সংঘাতের কারণে দেশটিতে এক লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে এবং দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই সংঘাত সুদানের অর্থনীতিকেও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
জাতিসংঘের এই পদক্ষেপ সুদানে সহিংসতা বন্ধ করতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারে। তবে, এই সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য সুদানের সরকার ও জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের প্রয়োজন।