এই দিনে যা ঘটেছিল কারাবালা প্রাঙ্গণে

কুফাবাসীর বাইয়াতের আগ্রহ : ৬০ হিজরিতে ইরাকবাসী যখন জানতে পারল হুসাইন (রা.) ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া (রা.)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেননি, তখন তারা প্রায় ১৫০ মতান্তরে ৫০০ চিঠি পাঠিয়ে হুসাইন (রা.)-এর হাতে খেলাফতের বাইয়াত করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। হুসাইন (রা.) প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ের জন্য চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফায় পাঠান এবং কুফাবাসী হুসাইন (রা.)-এর পক্ষে মুসলিমের হাতে বাইআত গ্রহণ করতে শুরু করে।

কুফায় বিদ্রোহ দমনের প্রস্তুতি : উমাইয়া খলিফা ইয়াজিদ গভর্ণর উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদকে কুফাবাসীর বিদ্রোহ দমন করার দায়িত্ব প্রদান করে। উবায়দুল্লাহ কুফাবাসীকে ইয়াজিদের ব্যাপারে হুঁশিয়ার করলে তারা বাইয়াত ভঙ্গ করে পলায়ন করে। এদিকে হুসাইন (রা.)-কে সতর্ক করে মুসলিম ইবনে আকিল চিঠি লিখলেন, ‘হুসাইন! পরিবার-পরিজন নিয়ে ফেরত যাও। কুফাবাসীদের ধোঁকায় পোড়ো না। কেননা তারা তোমার সঙ্গে মিথ্যা বলেছে। আমার সঙ্গেও তারা সত্য বলেনি। আমার দেওয়া এই তথ্য মিথ্যা নয়।’

এই চিঠি পাঠানোর আগে মুসলিম ইবনে আকিল কুফাবাসীর অনুরোধে হুসাইন (রা.)-কে কুফায় আগমনের অনুরোধ করেন। সেই চিঠির ভিত্তিতে ৮ জিলহজ তিনি কুফার উদ্দেশে রওনা করেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-সহ বেশির ভাগ সাহাবি হুসাইন (রা.)-কে কুফায় যেতে নিষেধ করেন। কুফাবাসীর হাতে আলী (রা.) নির্মমভাবে শহীদ হওয়ার ঘটনাও তাঁরা স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু তিনি সব নিষেধ উপেক্ষা করে যাত্রা অব্যাহত রাখেন।

সিরিয়া গমনের পথে বাধাদান : পথিমধ্যে মুসলিমের চিঠি পেয়ে তিনি কুফার পথ পরিহার করে সিরিয়ার পথ ধরেন। উদ্দেশ্য ছিল ইয়াজিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। কিন্তু ইয়াজিদের সৈন্যরা তাঁর পথ রোধ করে। তারা তাঁকে কোথাও যেতে দিতে অস্বীকার করল। ফলে উভয় দলের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে যায়। অসীম সাহসে যুদ্ধ অব্যাহত রাখেন তাঁরা।

হুসাইন (রা.) ও তাঁর সঙ্গীদের শাহাদাত বরণ : যুদ্ধ করতে করতে এক সময় তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা শহীদ হন। শামির ইবনে জুলজাওশান নামক এক নরপশুর কূটচালে সন্ধির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। অসম এই যুদ্ধে আঘাতে আঘাতে হুসাইন (রা.) মাটিতে পড়ে যান এবং সম্মিলিত আঘাতে মহানবী (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্রকে শহীদ করা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শাহাদাতের পর হুসাইন ইবনে আলী (রা.)-এর দেহ মোবারকে মোট ৩৩টি বর্শার এবং ৩৪টি তরবারির আঘাত ছাড়াও অসংখ্য তীরের জখমের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। এবং তাঁর পক্ষের প্রায় ৭১-৭৩ জন শাহাদাতবরণ করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *