অভাবের তাড়নায় স্ত্রীর ওড়না পরে লজ্জা নিবারণ, জোটে না খাবারও

স্ত্রী আর দুই ছেলে নিয়ে ছোট্ট একটি সংসার ছিলো মো. সুলতানের। যতদিন শরীরে শক্তি ছিল কাজ-কর্ম করে চালাতেন সংসার। এখন বয়স বাড়ার সাথে সাথে অক্ষম হয়ে পড়ছেন তিনি। এদিকে দুই ছেলে নিচ্ছেন না কোনো খোঁজ তাই অভাব হয়েছে তাদের নিত্যসঙ্গী। এখন অন্যের জমিতে তোলা ঘরে জীবন কাটাচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী। জোটে না দুবেলা খাবার। ভিক্ষা করে লোকের বাড়ি থেকে চেয়ে আনা পান্তা ভাত শুকিয়ে চাল হলে সেগুলো ফের রান্না করে খান। এভাবেই লোকের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে খাবার যোগাড় করেন সুলতানের স্ত্রী সকিনা বেগম।

আক্ষেপের সুরে ওই বৃদ্ধ বলছিলেন, ‘দুই বেলা ভাত জোটে না, তার মধ্যে লুঙ্গি? টাকার অভাবে বৌয়ের ওড়না পরে থাকি।’৯৫ বছরের বৃদ্ধ সুলতান এলাকায় সুলতান ডাক্তার নামে পরিচিত। পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ১ম লেন বোহালগাছিয়া এলাকায় সত্তরোর্ধ্ব স্ত্রী সকিনা বেগমকে নিয়ে থাকেন তিনি। এই দম্পতির দুই ছেলে মোস্তফা ও মোশাররফ। তারা যে যার মতো থাকেন। বাবা-মায়ের খোঁজ নেন না।

বৃদ্ধ সুলতান বলেন, ‘করোনার কারণে তিন মাস ঘর থেকে নামতে পারি নাই। তখন আল্লাহ চালাইছে। মানুষ কিছু কিছু সহায়তা দিয়েছে। এখন মানুষের কাছে ভিক্ষার জন্য গেলে দুই টাকা দিলে এক টাকা ফেরত চায়। কাজ করতে পারি না। কিন্তু প্রতিদিন ৪০ টাকার ঔষধ খাওয়া লাগে। ওষুধ না খেলে বিছানা থেকে ওঠা দায়। বৌকে খেটে খাওয়ানোর কথা ছিলো আমার, কিন্তু এখন বৌ আমাকে ভিক্ষা করে খাওয়ায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই বেলা খাত খাওয়ার উপায় নেই তার মধ্যে লুঙ্গি কিনমু কেমনে? আমার পরার মতো কিচ্ছু নাই। পুরাতন লুঙ্গিগুলো ছেঁড়া। তাই ঘরে বৌয়ের ওরনা পরে থাকি। জব্বার দারোগা নামে একজনের বাসায় একশ টাকার বিনিময়ে থাকি। তিনি অনেক ভালো মানুষ তাই আমাদের কষ্ট দেখে এখানে থাকতে দিয়েছেন। ঘরে কোনো বিদ্যুৎ নাই। বৃষ্টির দিনেও পানি পড়ে।’

তার স্ত্রী সকিনা বেগম বলেন, ‘আমরা ভিক্ষা করে খাই। স্বামী বয়সের সময় বড় গাড়ি চালাইছে। তখন সুখের দিন ছিল। তিনি এখন আর কোনো কাজ করতে পারেন না। আমি ভিক্ষা করে যা পাই তা ওষুধ কিনতে চলে যায়। সরকারি কোনো সহায়তা পাই না। বয়স্ক ভাতার জন্য মেম্বার (পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন) অনেক আগে নাম নিয়েছে। কিন্তু এখনও বয়স্ক ভাতার কোনো খবর নাই।’

বর্তমানে কিভাবে কি খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে সকিনা বলেন, ‘মানুষের বাসা থেকে পানি ভাত ভিক্ষা করে এনে সেই ভাত শুকাই। শুকনো ভাত যখন চাল হয় তখন সেই চাল আবার রান্না করে খাই। মানুষের বাসার একদিনের তরকারি না ফালাইয়া আমাদেরকে দেয় আমরা সেগুলো জ্বাল দিয়ে খাই।’

‘ভিক্ষা করে যে টাকা পাই তা দিয়ে কেরোসিন, বুড়ো-বুড়ির ওষুধ আর ঘরভাড়ার পেছনে চলে যায়। সরকার থেকে আমাদের জন্য একটু ভাতার ব্যবস্থা করলে জীবনের শেষ সময়টা ভালোভাবে কাটাতে পারতাম।’এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিনের মোবাইল ফোন একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।উপজেলা নির্বাহী অফিসার লতিফা জান্নাতি বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে, আমি ওই পরিবারকে সহায়তা করতে তাদের বাড়ি যাচ্ছি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *